সিবিএন ডেস্ক:
নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজ আগেই হেরে বসে ছিল বাংলাদেশ। শেষ ম্যাচে একটি জয়ের খোঁজে ছিল টাইগাররা। যাতে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীটা রাঙানো যায় অন্তত একটি জয়ে। কিন্তু ভাগ্য বদল হলো না বিশেষ দিনটিতেও। শেষ ওয়ানডেতে ১৬৪ রানের বড় ব্যবধানে হেরে হোয়াইটওয়াশ (৩-০) হয়েছে তামিম ইকবালের দল। এর ফলে কিউইদের মাটিতে জয় অধরাই থেকে গেলো বাংলাদেশের।
এমনিতেই কঠিন টার্গেট, তার ওপর আবার নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে এত রান করার ইতিহাসও নেই বাংলাদেশের। সব মিলিয়ে হোয়াইটওয়াশ এড়ানোর চ্যালেঞ্জটা ছিল কষ্টসাধ্য। কঠিন সেই চ্যালেঞ্জে খেলতে নেমে পুরোপুরি খেই হারায় বাংলাদেশ। ব্যাটিং ব্যর্থতার আরেকটি নজির রেখে তারা ৪২.৪ ওভারে ১৫৪ রানেই গুটিয়ে গেছে।
ওয়েলিংটনের তৃতীয় ওয়ানডে জিততে বাংলাদেশকে করতে হতো ৩১৯ রান। শুরুটা অবশ্যই ভালো হওয়া প্রয়োজন ছিল। কিন্তু তৃতীয় ওভারে অধিনায়ক তামিম দায়িত্বের ভার বইতে পারলেন না। ৯ বলে মাত্র ১ রান করে সাজঘরে ফেরেন হেনরির প্রথম শিকার হয়ে। বাড়তি বাউন্স পাওয়া বলে খোঁচা মেরে আউট হয়েছেন এই ওপেনার। ব্যাট বাইরে নিয়ে যতক্ষণে বুঝেছেন বল ছেড়ে দেবেন, ততক্ষণে ব্যাট ছুঁয়ে গেছে বল। আর সেটি গ্লাভাসবন্দি করতে মোটেও ভুল হয়নি টম ল্যাথামের।
তামিমের বিদায়ের পর আরেকবার ব্যর্থ সৌম্য। দ্রুত রান তোলার মানসিকতা নিয়ে নামা বাঁহাতি ব্যাটসম্যান উড়িয়ে মারতে গিয়ে ফাইন লেগে ধরা পড়েন ট্রেন্ট বোল্টের হাতে। হেনরির দ্বিতীয় শিকারে পরিণত হওয়ার আগে ৬ বলে করতে পারেন মোটে ১ রান।
বাংলাদেশের দুর্দশা এখানেই থামেনি। দারুণ খেলতে থাকা লিটন বোল্টের দুর্দান্ত এক ক্যাচে প্যাভিলিয়নে ফিরলে সফরকারীরা ৭ ওভারে ২৬ রান তুলতেই হারায় ৩ উইকেট। এবারও বোলার সেই হেনরি। কিউই পেসারের লেন্থ বলে থার্ডম্যানে ঝাঁপিয়ে পড়ে একহাতে দেখার মতো এক ক্যাচ নিয়েছেন বোল্ট। তাতে ২১ রানে শেষ হয় লিটনের ইনিংস। ২১ বলের ইনিংসটি সাজান ৩ বাউন্ডারিতে।
তার পরে ব্যর্থতার মিছিলে যোগ দেন ব্যাটিং অর্ডারে প্রমোশন পাওয়া মোহাম্মদ মিঠুন। তাতেও কাজ যদি কিছু হতো। উল্টো তার পারফরম্যান্সে হলো ‘ডিমোশন’! পাঁচ থেকে উঠিয়ে চারে পাঠানো এই ব্যাটসম্যান আজ লম্বা করতে পারেননি ইনিংস। মাত্র ৬ রান করে আউট হয়েছেন তিনি।
টপ অর্ডারের ব্যর্থতায় মুশফিকুর রহিমের সঙ্গে ইনিংস মেরামতে ৩৯ বল খেললেও শেষরক্ষা হয়নি মিঠুনের। কাইল জেমিসনের বল স্কয়ার লেগ দিয়ে উড়িয়ে মারতে গিয়ে ধরা পড়েন তিনি মিচেল স্যান্টনারের হাতে। তার পর অবশ্য প্রতিরোধ গড়ার ইঙ্গিত ছিল মাহমুদউল্লাহ ও মুশফিকের ব্যাটে। কিন্তু হতাশ করেছেন মুশফিক। নিশামের শর্ট বলে টাইমিং করতে পারেননি ঠিকমতো। তার ওপর পুল করতে গিয়ে ব্যাটের নিয়ন্ত্রণও ছিল না। ফলাফল উঠে যাওয়া বল নিজেই ক্যাচ নেন নিশাম। মুশফিক ফেরেন ৪৪ বলে ২১ রানে। একই ওভারে মেহেদী মিরাজকে শূন্য রানে ফিরিয়ে বাংলাদেশের ইনিংসের পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয় কিউইরা। এক ওভার বিরতি দিয়ে নিশাম এর পর ফেরান আরেক মেহেদীকে (৩)।
কিছু বল খেলে তার পর বিদায় নেন তাসকিন।তাকে কনওয়ের ক্যাচ বানিয়ে চতুর্থ উইকেট তুলে নেন ম্যাট হেনরি। ধ্বংসস্তুপের মাঝে তাও লড়াই করে গেছেন মাহমুদউল্লাহ। হালকা ঝড় তোলার চেষ্টা করেন শেষ দিকে। ৭৩ বলে অপরাজিত ছিলেন ৭৬ রানে। হারের দিন যা ছিল বাংলাদেশের সান্ত্বনা পুরস্কার। শেষ দিকের সঙ্গী রুবেল হোসেন ও মোস্তাফিজুর রহমান দ্রুত সাজঘরে না ফিরলে আরও বড় হতো তার ইনিংস!
৭.৪ ওভারে ২৭ রানে ৫ উইকেট নিয়েছেন জেমস নিশাম। ২৭ রান দিয়ে ৪টি নিয়েছন ম্যাট হেনরি।
অথচ শুরুর পূর্বাভাস ছিল অন্যরকম। মনে হয়েছিল, নিউজিল্যান্ডকে হয়তো অল্পতে বেঁধে রাখতে পারবে বাংলাদেশ। কিন্তু শেষের দৃশ্যপটে লেখা ছিল অন্যকিছু। তাই ডেভন কনওয়ে ও ড্যারিল মিচেলের অভিষেক সেঞ্চুরিতে রান পাহাড়ে চাপা পড়ে তামিম ইকবালরা।
কনওয়ে খেলেছেন ১২৬ রানের অসাধারণ ইনিংস। ম্যাচ ও সিরিজ সেরা দুটোই হয়েছেন তিনি। আর ইনিংসের শেষ বলে সেঞ্চুরি পাওয়া মিচেল অপরাজিত ছিলেন ১০০ রানে। এই দুই ব্যাটসম্যানের বীরত্বে ওয়েলিংটনের তৃতীয় ওয়ানডেতে নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৬ উইকেটে ৩১৮ রান করেছে নিউজিল্যান্ড। অবশ্য এত বড় স্কোরের পেছনে বাংলাদেশের বাজে ফিল্ডিং আবারও কাঠগড়ায় দাঁড়িয়েছে। সেঞ্চুরিয়ান মিচেলের তিন তিনটি ক্যাচ মিস করেছে সফরকারীরা। যে ভুলের কারণে স্কোরবোর্ড সমৃদ্ধ হয়েছে কিউইদের!
বাংলাদেশের সবচেয়ে সফল বোলার রুবেল। এই পেসার ১০ ওভারে ৭০ রান দিয়ে পেয়েছেন ৩ উইকেট। আর একটি করে উইকেট নিয়েছেন মোস্তাফিজ, তাসকিন ও সৌম্য।
আমরা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।